লিডস টেস্টে যেন সেঞ্চুরির উৎসব বসেছে ভারতের ড্রেসিংরুমে। এক টেস্টেই পাঁচটি সেঞ্চুরি করে ইতিহাস গড়েছে ভারতীয় দল। টেস্ট ইতিহাসে প্রথমবারের মতো এক ম্যাচে ভারতের পাঁচ ব্যাটার পেয়েছেন শতরান। এই কীর্তির সুবাদে এক বিব্রতকর রেকর্ড থেকে অবশেষে মুক্তি পেল বাংলাদেশ, দক্ষিণ আফ্রিকা ও শ্রীলঙ্কা। এতদিন এই তিন দেশের বিপক্ষেই এক টেস্টে ভারতের সর্বোচ্চ চারটি করে সেঞ্চুরির রেকর্ড ছিল। এবার সেই রেকর্ড পেছনে ফেলে নতুন উচ্চতায় উঠল রোহিত শর্মার দল।
লিডসের এই টেস্টে দুই ইনিংসে মিলিয়ে সেঞ্চুরি করেছেন যশস্বী জয়সওয়াল (১০১), শুবমান গিল (১৪৭), লোকেশ রাহুল (১৩৭) এবং ঋষভ পন্ত (১৩৪ ও ১১৮)। জোড়া শতরান করা পন্ত গড়েছেন আরও একটি অনন্য রেকর্ড। ১৪৮ বছরের টেস্ট ইতিহাসে প্রথম এশিয়ান উইকেটরক্ষক হিসেবে দুই ইনিংসেই সেঞ্চুরি পাওয়ার কৃতিত্ব দেখিয়েছেন তিনি। বিশ্বের দ্বিতীয় উইকেটরক্ষক হিসেবে এই কীর্তি গড়লেন তিনি। এর আগে শুধু জিম্বাবুয়ের অ্যান্ডি ফ্লাওয়ারই (২০০১) এই কীর্তি গড়েছিলেন। ভারতের হয়ে এক টেস্টে চার সেঞ্চুরির নজির ছিল আগেও। ২০০৭ সালে মিরপুরে বাংলাদেশের বিপক্ষে, ২০১০ সালে ইডেন গার্ডেন্সে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে এবং ২০১৭ সালে নাগপুরে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে এক ইনিংসেই চার সেঞ্চুরি করেছিল ভারত। এবার সেই রেকর্ড ছাপিয়ে গেলেন পন্তরা।
ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হেডিংলি টেস্টের তৃতীয় দিন আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত নিয়ে অসন্তুষ্টি প্রকাশ করায় ভারতের উইকেটরক্ষক-ব্যাটার ঋষভ পান্তকে আনুষ্ঠানিকভাবে তিরস্কার করেছে ক্রিকেটের প্রধান নিয়ন্ত্রক সংস্থা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি)।
এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আইসিসি জানিয়েছে, হেডিংলি টেস্টের তৃতীয় দিন লেভেল ওয়ান নিয়ম ভঙ্গ করেছেন পান্ত।
আইসিসি আরও জানিয়েছে, ‘প্লেয়ার্স এন্ড প্লেয়ার্স সাপোর্ট পার্সোনেল’ আচরণবিধির ২.৮ অনুচ্ছেদ ভঙ্গ করেন পান্ত। যা আন্তর্জাতিক ম্যাচ আম্পায়ারের সিদ্ধান্তে অসন্তোষ প্রকাশ করা।’
ইংল্যান্ডের ব্যাটিং ইনিংসের ৬১তম ওভার শেষে নিয়ম ভঙ্গ করেন পান্ত। ঐ ওভার শেষে বল পরিবর্তনের কথা দুই অনফিল্ড আম্পায়ারকে জানায় ভারতীয়রা। এরপর বল গজ দিয়ে বলের আকৃতি পরীক্ষা করার পর বল পরিবর্তন না করার সিদ্ধান্ত নেন আম্পায়াররা। কিন্তু আম্পায়াদের সিদ্ধান্ত পছন্দ হয়নি পান্তের। তাই মেজাজ হারিয়ে আম্পায়ারদের সামনে মাটিতে বল ছুঁড়ে মারেন ভারতের সহ-অধিনায়ক। যা আচরণবিধির ২.৮ অনুচ্ছেদ ভঙ্গের পর্যায়ে পড়ে।
তিরস্কারের পাশাপাশি ১টি ডিমেরিট পয়েন্টও যোগ হয়েছে পান্তের নামের পাশে। গত ২৪ মাসে এই প্রথম মাঠে নিয়ম ভঙ্গ করলেন পান্ত।
পান্তের এমন আচরণ ভালভাবে নেননি দুই অনফিল্ড আম্পায়ার ক্রিস গাফানি ও পল রাইফেল। তাদের অভিযোগের ভিত্তিতে শাস্তি দেন ম্যাচ রেফারি রিচি রিচার্ডসন। নিজের দোষ স্বীকার করে নেওয়ায় শাস্তি মেনে নিয়েছেন পান্ত। তাই আর শুনানির প্রয়োজন পড়েনি।
হেডিংলি টেস্টের দুই ইনিংসেই সেঞ্চুরি করেছেন পান্ত। দুই ইনিংসে যথাক্রমে- ১৩৪ ও ১১৮ রানের ইনিংস খেলেছেন তিনি।
বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের (বিওএ) উদ্যোগ এবং বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর সার্বিক সহযোগিতায় আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটির প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন উপলক্ষ্যে ঢাকায় বর্ণাঢ্য র্যালির আয়োজন করা হয়।
মঙ্গলবার র্যালির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান।
‘লেটস মুভ’ প্রতিপাদ্যে আয়োজিত এ র্যালির মূল উদ্দেশ্য ছিল ক্রীড়াবিদ ও সাধারণ জনগণকে শরীরচর্চা এবং ক্রীড়া কার্যক্রমে উদ্বুদ্ধ করা। পাশপাশি অন্যদেরকেও ক্রীড়াচর্চায় আগ্রহী করে তোলা।
দেশের সাতটি বিভাগীয় শহরেও ক্রীড়া সংস্থাসমূহের সহায়তায় একযোগে র্যালিগুলো অনুষ্ঠিত হয়। ঢাকার কেন্দ্রীয় র্যালিটি ভোর সাড়ে ৬টায় বাংলাদেশ শিশু একাডেমি থেকে শুরু হয়ে শিক্ষা ভবন, বাংলাদেশ সচিবালয়, জিরো পয়েন্ট ও জিপিও অতিক্রম করে জাতীয় স্টেডিয়ামের ১ নম্বর গেটে এসে শেষ হয়।
এই র্যালিতে জাতীয় পর্যায়ের ক্রীড়াবিদ, প্রশিক্ষক, সংগঠক, যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় ক্রীড়া পরিষদের কর্মকর্তা, সামরিক ও বেসামরিক বিভিন্ন সংস্থা এবং দুই হাজারেরও বেশি ক্রীড়াপ্রেমী অংশগ্রহণ করেন।
র্যালি শেষে জাতীয় স্টেডিয়ামে সেনাবাহিনীর অর্কেস্ট্রা দল মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। এ সময় সেনাপ্রধান উপস্থিত অলিম্পিয়ানদের বিশেষ সম্মাননা ও সনদপত্র প্রদান করেন।
অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারীরা এই আয়োজনকে প্রাণবন্ত ও উৎসবমুখর বলে মন্তব্য করেন। সঙ্গে বাংলাদেশ অলিম্পিক অ্যাসোসিয়েশন ও বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
৯৫ রান থেকে সেঞ্চুরিতে পৌঁছাতে খেলেছেন ২২ বল। ইংল্যান্ডের স্পিনার শোয়েব বশিরের বলে এক রান নিয়ে যখন সেঞ্চুরি ছুঁলেন, স্বস্তির একটা নিশ্বাসই যেন ছাড়লেন ঋষভ পন্ত। আগের ইনিংসের মতো এবার অবশ্য আর ডিগবাজি দিয়ে উদ্যাপন করেননি। হয়তো পরেরবারের জন্য তুলে রেখেছেন। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হেডিংলিতে আজ টেস্টের চতুর্থ দিনে অনন্য এক কীর্তিই গড়ে ফেললেন পন্ত। দুই ইনিংসেই সেঞ্চুরি করা অষ্টম ভারতীয় ব্যাটসম্যান তিনি, বিদেশের মাটিতে পঞ্চম। এক ম্যাচে দুই ইনিংসেই সেঞ্চুরি ভারতের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি আছে সুনীল গাভাস্কারের (৩), দুবার আছে রাহুল দ্রাবিড়েও। একবার করে এমন কীর্তি আছে বিজয় হাজারে, আজিঙ্কা রাহানে, বিরাট কোহলি ও রোহিত শর্মার। পন্তের সৌজন্যে ইংল্যান্ডে ভারতের কোনো ব্যাটসম্যান এই প্রথম টেস্টের দুই ইনিংসেই সেঞ্চুরি করলেন। তবে ভারতের এই উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান একটা জায়গায় সব ভারতীয়ের চেয়ে আলাদা। এমনকি পুরো ক্রিকেট ইতিহাসেই তার আগে এমন অর্জন ছিল আর একজনের। উইকেটকিপার-ব্যাটসম্যান হিসেবে এত দিন দুই ইনিংসেই সেঞ্চুরি করা একমাত্র ক্রিকেটার ছিলেন জিম্বাবুয়ে কিংবদন্তি অ্যান্ডি ফ্লাওয়ার। ২০০১ সালে হারারেতে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে দুই ইনিংসে ১৪২ ও অপরাজিত ১৯৯ রান করেছিলেন। এবার তার পাশে বসলেন পন্ত। হেডিংলি টেস্টে দুই ইনিংস মিলিয়ে মোট পাঁচটি সেঞ্চুরি দেখেছে ভারত- এর আগে দেশটির ইতিহাসে কখনো এমন কিছু দেখা যায়নি। পন্ত ছাড়াও সেঞ্চুরি করেছেন যশস্বী জয়সোয়াল, লোকেশ রাহুল ও শুভমান গিল। চতুর্থ দিনের চা বিরতি পর্যন্ত ৪ উইকেট হারিয়ে ২৯৮ রান করেছে ভারত, তারা এগিয়ে আছে ৩০৪ রানে। ২২৭ বলে ১২০ রান করে রাহুল দ্রাবিড় ও ১২ বলে ৪ রান করে অপরাজিত আছেন করুন নায়ার। ১৪০ বলে ১১৮ রান করে আউট হয়ে গেছেন পন্ত।
ঢাকা, ২২ জুন ২০২৫ (বাসস) : এশিয়ান বোলারদের মধ্যে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারের রেকর্ড গড়েছেন ভারতের পেসার জসপ্রিত বুমরাহ। এক্ষেত্রে পাকিস্তানের কিংবদন্তি পেসার ওয়াসিম আকরামকে ছাড়িয়ে গেলেন তিনি।
হেডিংলিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে চলমান টেস্টের দ্বিতীয় দিন ৩ উইকেট নেন বুমরাহ। এর মাধ্যমে অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে মোট ৩২ ম্যাচ খেলে ১৪৮ উইকেট শিকার করেছেন বুমরাহ। এতে ভেঙে যায় আকরামের রেকর্ড।
অস্ট্রেলিয়া, ইংল্যান্ড, নিউজিল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে মোট ৩২ ম্যাচ খেলে আকরাম শিকার করেছেন ১৪৬ উইকেট। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্টের দ্বিতীয় দিন ৩ উইকেট নিয়ে আকরামের রেকর্ড দখলে নিলেন বুমরাহ।
অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ১২ ম্যাচে ৬৪, ইংল্যান্ডে ১০ ম্যাচে ৪০, নিউজিল্যান্ডে ২ ম্যাচে ৬ এবং দক্ষিণ আফ্রিকায় ৮ ম্যাচে ৩৮ উইকেট নিয়েছেন বুমরাহ।
অন্যদিকে আকরাম, অস্ট্রেলিয়ায় ৯ ম্যাচে ৩৬, ইংল্যান্ডে ১৪ ম্যাচে ৫৩, নিউজিল্যান্ডে ৭ ম্যাচে ৫০ এবং দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে ২ ম্যাচে ৭ উইকেট শিকার করেছেন।
এই তালিকায় তৃতীয় স্থানে আছেন ভারতীয় স্পিনার অনিল কুম্বলে। ৩৫ ম্যাচে ১৪১ উইকেট শিকার করেছেন তিনি।
চতুর্থ ও পঞ্চম স্থানে আছেন ভারতের দুই পেসার ইশান্ত শর্মা ও মোহাম্মদ সামি। ইশান্ত ৪১ ম্যাচে ১৩০ ও সামি ৩৪ ম্যাচে ১২৩ উইকেট নিয়েছেন।
ষষ্ঠ স্থানে আছেন ১৩৩ ম্যাচে ৮০০ উইকেট নিয়ে বিশ্ব রেকর্ডের মালিক শ্রীলংকার মুত্তিয়া মুরালিধরন। ২২ ম্যাচ খেলে ১২০ উইকেট নিয়েছেন তিনি।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ছেড়ে এখন ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টে মনোযোগী হয়েছেন দক্ষিণ আফ্রিকার সাবেক ক্রিকেটার ফাফ ডু প্লেসি। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের মেজর লিগ ক্রিকেটে (এমএলসি) টেক্সাস সুপার কিংসের হয়ে করেছেন দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি, তাতে বিরল এক রেকর্ডে ওঠেছে তার নাম। সান ফ্রান্সিসকো ইউনিকর্নের বিপক্ষে ১০০ রানের দারুণ এক ইনিংস খেলার সুবাদে ইতিহাসের তৃতীয় বয়োজ্যেষ্ঠ ক্রিকেটার হিসেবে টি-টোয়েন্টিতে সেঞ্চুরির দেখা পেয়েছেন ৪১ বছরের ডু প্লেসি।
ম্যাচে সান ফ্রান্সিসকোর বিপক্ষে আগে ব্যাট করতে নেমে সুপার কিংস নির্ধারিত ওভারে ৫ উইকেটে ১৯৮ রান তুলে। ব্যাট হাতে ঝড় বইয়ে ৫১ বলেই পূর্ণ করেন, তিন অঙ্কের দেখা পান ডু প্লেসি। ৬টি চার ও ৭ ছক্কার সাহায্যে করেন বরাবর ১০০ রান।
তবে ১৯৯ রানের লক্ষ্য দিয়েও ম্যাচে প্রতিপক্ষকে হারাতে পারেনি ডু প্লেসির টেক্সাস। মারকাটারি ব্যাটিংয়ে ২৩ বল এবং ৭ উইকেট হাতে রেখেই জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় সান ফ্রান্সিসকো। তবে ম্যাচের ফল পক্ষে না এলেও ব্যক্তিগত নৈপুণ্যে ঠিকই আলো ছড়িয়েছেন ডু প্লেসি। ৪০ বছর ৩৪২ দিন বয়সে তিন অঙ্ক ছুঁয়ে বনে গেছেন তৃতীয় সর্বোচ্চ বয়সি ব্যাটার হিসেবে টি-টোয়েন্টি সেঞ্চুরিয়ান। তার ওপরে আছেন শুধু দুজন। ইংল্যান্ডের সাবেক অলরাউন্ডার পল কলিংউড ৪১ বছর ৬৫ দিন বয়সে ম্যাজিক ফিগার পূর্ণ করেন ২০১৭ সালে। এছাড়া দ্বিতীয় বয়োজ্যেষ্ঠ ব্যাটার হিসেবে (৪১ বছর ৩৭ দিন) গ্রায়েম হিক ২০০৭ সালে একই কীর্তি গড়েছেন।
গেল মাসে অনুষ্ঠিত হওয়া ফ্রেঞ্চ ওপেনের নারী এককের প্রথম রাউন্ডে ম্যাচটা স্বাগতিক এক টেনিস তারকাকে হারিয়ে জিতেছিলেন ব্রিটিশ টেনিস সুন্দরী কেটি বোল্টার। সেটিও প্রথম সেটে টাইব্রেকারে হারের পর কঠিন এক লড়াই শেষে দুই সেটে ঘুরে দাঁড়িয়ে জয় তুলে নিয়েছিল, যা তার জন্য ছিল বেশ আনন্দের, তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ইনবক্সে ঢুকতেই বোল্টারের সামনে খুলে যায় এক বিভীষিকার দরজা। ইনস্টাগ্রামে তাকে দেওয়া হুমকির মেসেজগুলো ছিল ঠিক এ রকম, ‘আশা করি ক্যানসারে মরবে।’, ‘তোমার দাদির কবর খুঁড়ে ফেলব, যদি কালকের মধ্যে মারা না যান।’, ‘মরে যাও, আমার মায়ের পাঠানো টাকা তোমার কারণে উড়ে গেছে।’ ব্রিটিশ টেনিস তারকা কেটি বোল্টার হয়তো জীবনের সেরা ম্যাচগুলোর একটি খেলেছিলেন প্যারিসের কোর্টে। ফ্রেঞ্চ ওপেনের প্রথম রাউন্ডে প্রথম সেটের টাইব্রেকারে হেরে গেলেও পরের দুই সেটে দুর্দান্তে ঘুরে দাঁড়িয়ে জয় ছিনিয়ে নেন ৬-৭, ৬-১, ৬-১ স্কোরলাইনে। সেটাই ছিল তার রোলাঁ গারোর মূল পর্বে প্রথম জয়। কিন্তু সেই আনন্দের সঙ্গে সঙ্গেই শুরু হয় এক ‘অন্ধকার অধ্যায়।’ মোবাইলে ঢুকতেই ইনবক্সে একের পর এক অশ্রাব্য গালি-গালাজ, ব্যক্তিগত আক্রমণ, এমনকি পরিবারকে ঘিরে ভয়ংকর হুমকি। বোল্টারের নিজের কথায়-‘এসব এখন এত স্বাভাবিক হয়ে গেছে, যেন এটা আমার রুটিনের অংশ।’
সম্প্রতি বিবিসি স্পোর্টসকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বোল্টার যা বলেছেন, তা শুধু নিজের না এ যেন একটা প্রজন্মের ভয় আর বিষণ্ণতা। তিনি বলেন, ‘শুরুতে এগুলো খুব ব্যক্তিগতভাবে নিতাম। আতঙ্কে থাকতাম, মানসিকভাবে বেশ চাপ অনুভব করতাম। মাঝে মধ্যে কান্না করতাম, ডিপ্রেশনে ভুগতাম। তবে ধীরে ধীরে এটা অভ্যাস হয়ে গেছে। এখন ভাবি এরা কারা? কীভাবে এত ঘৃণা তৈরি হয় একজন মানুষকে ঘিরে?’ তবে ব্রিটিশ এ টেনিস সুন্দরী এটাও জানেন, এর পেছনে একটা বড় ভূমিকা রয়েছে ব্যাটিংয়ের। যারা খেলায় বাজি ধরে যারা হেরে যায়, তাদের অনেকেই রাগ ঝাড়েন সরাসরি খেলোয়াড়দের ওপর। গবেষণায় ওঠে এসেছে, ২০২৪ সালেই অন্তত ৮ হাজার হুমকিমূলক বার্তা এসেছে টেনিস খেলোয়াড়দের সামাজিক মাধ্যমে, যার প্রায় ৪০ শতাংশই এসেছে ‘রাগি জুয়াড়িদের’ কাছ থেকে।
একজন তো একবারেই ২৬৩টি হুমকির বার্তা পাঠিয়েছেন। এমন ১৫টি অ্যাকাউন্টের তথ্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে, তার মতো রয়েছে আরও হাজারও। সবচেয়ে উদ্বেগজনক হলো, এসব ‘ঘৃণা ব্যবসাতে’ সামাজিক মাধ্যমগুলোর প্রতিক্রিয়া প্রায় শূন্য। ইনস্টাগ্রাম, ফেসবুকের মালিক প্রতিষ্ঠান মেটা কোনো মন্তব্যই করেনি। অথচ বোল্টার জানাচ্ছেন, তার ইনবক্সের স্প্যামবক্সে প্রতিদিনই অশ্লীল ছবি পাঠানো হয়। তরুণীরা যারা এই পেশায় আসছে, তারা কীভাবে মানসিকভাবে সামলাবে এসব? যদিও তিনি মাঝে মধ্যে বিপরীত পথে হাঁটেন-অপমানকারীদের উত্তর দেন নম্রভাবে। সেই সময় অনেকে আবার জবাব দেন, ‘আমি আসলে তোমার বড় ভক্ত, আবেগে লিখে ফেলেছি।’ ২৮ বছর বয়সি বোল্টারের বাগদত্তো অস্ট্রেলিয়ার টেনিস তারকা অ্যালেক্স ডি মিনর। তিনিও হুমকি পান তার হবু স্ত্রীর কারণে, আবার উল্টো ঘটনাও ঘটে। ডি মিনরের ম্যাচের হুমকি আসে ব্রিটিশ সুন্দরীর ইনবক্সে। যেন দুই খেলোয়াড় এক সঙ্গে খেলছেন- তবে একপাশে টেনিস, অন্যপাশে ট্রল-টেনিস। আসন্ন উইম্বলডন সামনে রেখে বোল্টার প্রস্তুতি নিচ্ছেন, কিন্তু সঙ্গে বাড়ছে মানসিক প্রস্তুতির চাপও। কারণ ঘরে খেলতে নামার মানে এখানে শুধু প্রতিপক্ষ নয়, ইনবক্সের হুমকি/আক্রমণাত্মক বার্তাগুলো যেন প্রতিদিনের প্রতিদ্বন্দ্বী।
যদিও সামাজিক মাধ্যমে হুমকি শুধু বোল্টার কিংবা ডি মিনরেই পান না। বিবিসির অনুসন্ধানে জানা গেছে বিশ্বের শীর্ষ টেনিস তারকা ইগা শিয়নটেক, জেসিকা পেগুলা, ওন্স জাবের, আরিনা সাবালেস্কার মতো খেলোয়াড়রাও জানিয়েছেন তারা প্রায় নিয়মিতভাবেই এই সাইবার সহিংসতার শিকার হন। বিশেষ করে নারী টেনিস খেলোয়াড়দের সঙ্গেই এ ঘটনা ঘটে বেশি।
মন্তব্য